স্বাধীনতা অর্জন ও মহাত্মা গান্ধীর জীবনাবসানের পরে ভারতবর্ষে স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব বহুগুণ কমে যায় এবং আস্তে আস্তে স্বদেশীর ধারণা ম্লান হতে থাকে।
পন্ডিত নেহেরু ও শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সোভিয়েত ধাঁচের সরকার নিয়ন্ত্রিত ভারী শিল্প (Heavy Industries) মহল গঠনে ভারত প্রযুক্তিগত উৎপাদনে কিছুটা এগিয়ে গেলেও গ্রাম নির্ভরশীল উৎপাদন যেমন কুটিরশিল্প - হস্তশিল্প - কৃষিভিত্তিক শিল্পগুলি অবহেলিত থেকে যায়। অন্যদিকে বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন দ্রব্য, যান্ত্রিক সামগ্রী এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত উৎপাদনে বিদেশি কোম্পানিগুলি প্রযুক্তিগত ভাবে বহুগুণ উন্নত হওয়ায় ভারতের বাজার ধরতে থাকে। পাশাপাশি বিদেশী বহু রাষ্ট্রীয় কর্পোরেট কোম্পানিগুলির ভারতের বাজার দখলের পরিকল্পনা চলতে থাকে।
এই সময় আমেরিকা (মূলত) গ্যাট (GATT) নামক একটি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক চুক্তির পুনর্গঠন করে। এই পুনর্নির্মিত গ্যাট চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকা-ইউরোপের উন্নত দেশগুলি বিনাশুল্কে বাধাহীন ব্যবসা-বাণিজ্য (ফ্রি ট্রেড) করবে উন্নতশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর সাথে এবং এই উন্নতশীল ও অনুন্নত দেশগুলিকে ধাপে ধাপে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাজার খুলে দিতে হবে উন্নত দেশগুলির পণ্য বিক্রির জন্য। ফলস্বরূপ উন্নত দেশগুলি উন্নতশীল ও অন্নুনত দেশগুলির বাজার দখল করে মুনাফা লুট করার পরিকল্পনা/ব্যবস্থা! আমেরিকার এই চুক্তির প্রভাব ভারতের রাজনৈতিক মহলে প্রবেশ করছিলো।
অপ্রত্যাশিতভাবে ১৯৯০-৯১ সালে ভারতবর্ষে আর্থিক সংকট দেখা দেয় এবং সেই কারণে ভারতের তৎকালীন রাজনৈতিক মহল ভারতের অর্থনৈতিক গঠনপ্রণালী/পরিকাঠামো পাল্টে ওপেন মার্কেট ধাঁচের মধ্যে নিয়ে আসে।
এই বহুমাত্রিক বিদেশি আর্থিক নীতির ভারতে বিস্তার ও বৈদেশিক আর্থিক ধারণার প্রভাব যেগুলি ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে ক্ষতিকারক দাঁড়াচ্ছিল এবং স্বদেশী আর্থিক ধারণার বিস্তারের পটভূমিতে রাষ্ট্রঋষি শ্রী দত্তপান্থ ঠেংড়ি ২১শে নভেম্বর ১৯৯১ সালে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের প্রতিষ্ঠা করেন।
আজ স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ উত্তরে শ্রীনগর থেকে দক্ষিনে কালিকট ও পূর্বে আগরতলা থেকে পশ্চিমে মুম্বাই পর্যন্ত স্বদেশী ধারণার প্রচার, অর্থনৈতিক শিক্ষা, দেশকে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভর গড়ে তুলতে সমাধান এবং দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য-কর্মসংস্থানের উন্নতির অনুকূলে সংগঠিত এক মহা-সংগ্রাম লড়ে চলেছে।
Home সংস্থাপন / Foundation