দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর যখন বিধ্বস্ত ইয়োরোপের দেশসমূহের হাত থেকে তাদের এশিয়া ও আফ্রিকাস্থিত উপনিবেশগুলি সমগ্র স্বাধীন হল তখন তারা প্রত্যেকেই চেয়েছিল তাদের দেশের অর্থনীতির উন্নতি করতে। এই তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ বিগত দুই বা তিনদশক ধরে ইয়োরোপের দেশগুলির অধীন ছিল। এই দুই বা তিনদশকে তাদের রীতিমত শোষণ করে ইয়োরোপের দেশগুলি তখন নিজেদের দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিল আর ক্রমাগত শোসিত হতে হতে এশিয়া ও আফ্রিকাস্থিত দেশগুলির অর্থনীতি তখন পতনের শেষ সীমায়। স্বাধীনতার পর স্বাভাবিকভাবেই সেই দেশগুলি চেয়েছিল তাদের এতদিন পরাধীন করে রাখা ইয়োরোপের দেশগুলির মত অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হতে এবং তখন তাদের মনে হয়েছিল যে ইয়োরোপের দেশগুলির মত উন্নত অর্থনীতির অধিকারী হতে গেলে তাদের সেই অর্থনৈতিক পথেরই পথিক হতে হবে অর্থনীতির যে পথের পথিক ছিল তত্কালীন ইয়োরোপীয় দেশসমূহ। শুধু ইয়োরোপ কেন তত্কালীন সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি মূলত: দুটি ধারাপথে প্রবহমান ছিল, একটি সোভিয়েত রাশিয়া নির্ভর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি যা মার্ক্স প্রণীত এবং অন্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি যা মূলত: কেইন্স প্রণীত। সদ্যস্বাধীন এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহ ( যাদেরকে একত্রে তৃতীয় বিশ্ব বলা হত ) এই দুটি ধারার মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নিয়েছিল।হয়তো তাদের এহেন অনুকরণের মানসিকতার পেছনে দীর্ঘ পরাধীনতার জন্য সৃষ্ট "দাসসুলভ দুর্বলতা" ( স্বামী বিবেকানন্দ কথিত ) দায়ী ছিল। কিন্তু ভারত ছিল এব্যাপারে ব্যতিক্রম, স্বাধীনতার পর ভারতের অর্থনীতি চালিত হয়েছিল মিশ্র অর্থনীতি নামক এক আলাদা অর্থনৈতিক পথে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এককালের বিশ্বগুরু ভারত হয়তো অনুকরণের দ্বারা চালিত না হয়ে নতুন কোনও অর্থনৈতিক পথ উদ্ভাবন করেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বলা যায় যে ভারত সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক উভয় অর্থনৈতিক পথকেই অনুসরণ করেছিল। মিশ্র অর্থনীতি অনুকরণমুক্ত আলাদা কোনও অর্থনৈতিক পথ নয় বরং মিশ্র অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি এবং ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি উভয়কেই অনুসরণ করে। মিশ্র অর্থনীতি ছিল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত আবার ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির মত ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের অধিকার ছিল তাতে। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভক্ত ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু দেশকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ধারাপথেই প্রবাহিত করতে চেয়েছিলকিন্তু শাসকদল কংগ্রেসের অনেক নেতাই ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সমর্থক হওয়ায় দেশকে সম্পূর্ণভাবে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পথেই প্রবাহিত করতে ব্যর্থ হয় নেহরু, আবার প্রধানমন্ত্রীর মত অগ্রাহ্য করে দেশ সম্পূর্ণ ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির পথে চলতেও অপারগ হয়। সেকারনে ভারতীয় অর্থনীতি তখন চালিত হয়েছিল ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক উভয় প্রকার অর্থনীতিরই অনুকরণে সৃষ্ট মিশ্র অর্থনীতি নামক এক হাসজারু অর্থনীতির দ্বারা ।
এই মিশ্র অর্থনীতিতে সোভিয়েত ধাচে বড় বড় রাষ্ট্র-আয়ত্ব কলকারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হল, পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগে স্থাপিত কলকারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমূহও রইলো, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নিয়মানুসারে তাদের মধ্যে ছিল না কোনও পারস্পরিক প্রতিযোগিতা। বিনিয়োগ ও বিপননের ক্ষেত্র পৃথক করা ছিল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের দ্বারা।
.. এই হাসজারু অর্থনীতির ফল হল মারাত্মক। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা না থাকার কারণে অন্যান্য ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মত শিল্প ও পরিষেবাক্ষেত্রের গুণগত মানের উত্কর্ষ সাধন ঘটলো না, উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশও ঘটলো না । বিনিয়োগের ক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধীন থাকায় নতুন বিনিয়োগকারীরা উঠে আসতে পারলেন না আবার বিপণনের ক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধীন থাকায় আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির প্রকোপও বৃদ্ধি পেল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির দ্বারা চালিত অন্যান্য দেশগুলির মতোই। আবার সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির দ্বারা চালিত অন্যান্য দেশগুলিতে বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে যেমন উন্নত পরিকাঠামো ও শক্তিশালী ভারী শিল্পক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছিল ভারতে তাও হল না, কারণ ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার, ব্যক্তিগত বিনিয়োগের অধিকার ও ব্যক্তিগত লভ্যাঙ্গ্শ কুক্ষিগত করার অধিকার বজায় থাকায় রাষ্ট্রের হাতে বিনিয়োগ করার মত প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না। সেই অর্থ কুক্ষিগত হয়েছিল কতিপয় ব্যবসায়ীর হাতে অর্থাত্ ধনতান্ত্রিক দেশগুলির মতোই আর্থিক বৈষম্য দেখা গেল ভারতে। অর্থাত্ সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক উভয় অর্থনীতির যা যা ক্ষতিকর দিক তা দেখা গেল এই মিশ্র-অর্থনীতির মধ্যে।কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক উভয় অর্থনীতির যে সামান্য ভালো দিক আছে তার থেকেও বঞ্চিত হল ভারতীয় অর্থনীতি । ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে অবাধ প্রতিযোগিতা "SURVIVAL OF THE FITTEST" বা “যোগ্যতমের উদ্বর্তন" ঘটায় মিশ্র অর্থনীতিতে "SURVIVAL OF THE RICHEST" বা "ধনীতমের উদ্বর্তন" ঘটল। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ “BIG PUSH“ নীতির দ্বারা অর্থনীতির বিকাশ সাধন করে মিশ্র অর্থনীতিতে স্বল্প রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ “SMALL PUSH" নীতিতে পরিণত হয়ে শুধুমাত্র দুর্নীতি-মহীরুহের গোরায় সার জল দিল।
একারনে এই সময় দেশে মৌলিক বুদ্ধির অধিকারীরা তাদের পরিকল্পনার বিকাশ সাধনে সফল হয় নি, সেই সুযোগ তারা পান নি এদেশে, তাদের মধ্যে অনেকেই তাই দেশত্যাগ করে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির দেশে গিয়ে সেখানকার মুক্ত পরিবেশে নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশ ঘটালেন, ফলস্বরূপ উপকৃত হল সেইসব দেশের অর্থনীতি , ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সুফল তারা তুলল পুরোমাত্রায়, ব্যর্থ হল ভারত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মণি ভৌমিকের কথা, উন্নত মেধার অধিকারী এই মহান গবেষক তার কাজের উপযুক্ত পরিবেশ ভারতে না পেয়ে চলে গেছিলেন ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সেখানে মুক্ত অর্থনীতির মুক্ত পরিবেশে তার প্রতিভা বিকাশের সর্বোচ্চ সোপানে আরোহন করে, ভারতীয় প্রতিভাবানের প্রতিভায় লাভবান হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।
ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সুফল লাভে ভারত বঞ্চিত হলেও ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির কুফল লাভে ভারত বঞ্চিত হয় নি। ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের অধিকার থাকায় অন্যান্য ধনতান্ত্রিক দেশসমূহের মতো আর্থিক বৈষম্য দেখা গেল ভারতের অর্থনীতিতে।
এতো গেল দেশের অর্থনীতির শিল্প নির্ভর অংশের কথা, দেশের কৃষিব্যবস্থাতে এসময় মঞ্চস্থ হচ্ছিল ভূমিসংস্কার নামক নাটক, ভূমি সংস্কারের নামে বড় জোতের মালিকদের অলাভজনক জমির ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিয়ে বিনিময়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল করার এবং ভূমিহীন কৃষকদের সামান্য জমি পাইয়ে দেওয়ার নামে তাদের রাজনৈতিক আনুগত্য ক্রয় করে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিল তত্কালীন শাসকবর্গ। তাতে সরকারের কৃষকবন্ধু হওয়ার ঢক্কানিনাদ শ্রুত হয়েছিল উচ্চধ্ধ্ব্ণিতে কিন্তু কৃষি বা কৃষকের প্রকৃত উপকার কিছুই হয়নি। কৃষিক্ষেত্রের প্রকৃত উপকারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, যেমন, উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি , কৃষকের জ্ঞান বৃদ্ধি প্রভৃতি কিছুই হয়নি সঠিক ভাবে । তবে হ্যা, সেচব্যবস্থার উন্নতিকল্পে এসময় প্রচুর অর্থব্যয় হয়েছিল, সাময়িকভাবে সেচব্যবস্থার উন্নতিও হয়েছিল, ফলস্বরূপ এসময়ে কৃষি উত্পাদনও বেড়ে ছিল লক্ষ্যনীয় ভাবে, কিন্তু এই নব প্রবর্তিত সেচব্যবস্থা দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতির অনুরূপ ছিল না, ছিল পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ, তাই এই সেচব্যবস্থা ভারতবর্ষের পরিবেশে স্থায়িত্ব লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছিল, তাই কৃষির সাময়িক যে উত্পাদন বৃদ্ধি এসময় ঘটেছিল তা স্থায়িত্ব লাভ করে নি।
আলোচ্য সময় আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ছিল তুলনায় ভালো, ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গ দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের তখনও প্রত্যক্ষ করেনি। পশ্চিমবঙ্গের তত্কালিন শাসকবর্গের দক্ষতায় পশ্চিমবঙ্গ শিল্পে খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল, বাকি ভারতের শিল্পক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার যখন স্বাধীনতার পর প্রথম দু’দশকে ঘটেছিল মাত্র ৩ শতাংশ হারে তখন পশ্চিমবঙ্গের শিল্পক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল ৫ শতাংশের কিছু বেশী। শিল্পক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে কিন্তু সেরকম কোনও সদর্থ্ক প্রভাব ফেলেনি। এর কারণ অবশ্য অর্থনীতি-জগত-উদ্ভূত নয় বরং রাজনীতি জ্গ্তেই আছে এর উত্তর। স্বাধীনতা আশীর্বাদের সঙ্গে সঙ্গে অভিশাপের মত আসা দেশভাগ পশ্চিমবঙ্গকেই আঘাত করেছিল সবচেয়ে বেশী। দেশভাগের ফলে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত ছিন্নমূল মানুষের ভীড় পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির চাহিদা-জোগান ভারসাম্যে আঘাত করেছিল । ১৯৪৭ সালের ১ কোটি ২০ লক্ষ জনসংখ্যার পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতার পর প্রথম একদশকে উদ্বাস্তু এসেছিলেন প্রায় ৮০ লক্ষ, এই বাড়তি চাহিদা পশ্চিমবঙ্গের তত্কালীন শিল্পবৃদ্ধিজনিত সুফ্ল্কে শুষে নিয়েছিল ব্লটিং কাগজের মতো। তবে পাশাপাশি একথাও বলা যায় যে পশ্চিমবঙ্গের তত্কালীন শিল্পবৃদ্ধি হয়তো উদ্বাস্তু সমস্যায় দীর্ণ পশ্চিমবঙ্গকে অর্থনৈতিক ভরাডুবির হাত থেকে রক্ষা করেছিল। অর্থনৈতিক উন্নতি না ঘটলেও দেশভাগের আঘাতকে সামলে পশ্চিমবঙ্গ নিজ অবস্থানে অটুট থাকতে পেরেছিল তত্কালীন শিল্পবৃদ্ধির জন্যই।
শিল্পক্ষেত্রে দেশভাগ্জনিত আঘাতকে সামলে উঠতে পারলেও কৃষিক্ষেত্রে পারেনি। দেশভাগ্জনিত কারণে স্বল্প জমি, উদ্বাস্তুজনিত কারণে প্রচুর জনসংখ্যা ফলস্বরূপ মাত্রাতিরিক্ত জনঘনত্ব অর্থাত্ বাড়তি চাহিদা এবং কম জোগান, এই জোড়া ফলার আক্রমণ সামলাতে পারেনি তত্কালীন পশ্চিমবঙ্গের কৃষিক্ষেত্র। তাই অনাদিকাল থেকে সুজলা সুফলা এই প্রদেশে তখন দেখা গেছিল খাদ্য ঘাটতি। এই খাদ্য ঘাটতি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেনি, অর্থনীতির সীমানা ছাড়িয়ে এই খাদ্যাভাবের যুগান্তকারী প্রভাব পড়েছিল তত্কালীন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য , চলচ্চিত্র এমনকি রাজনীতিতেও ।
এভাবেই কাটলো প্রথম দু'দশক, ইতিমধ্যে হাকিম বদলালো, দু'এক হাত ঘুরে প্রধানমন্ত্রী হলেন নেহরূতনয়া ইন্দিরা। হাকিম বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে হুকুমও কিছুটা বদলালো। এবার শুরু হল ব্যক্তিগত বিনিয়োগে চলা সংস্থাগুলির রাষ্ট্র-আয়ত্ব্করন। বিপুল অর্থ ক্ষতিপূরণ পেয়ে নিজেদের ধুকতে থাকা সংস্থাগুলিকে রাষ্ট্রের হাতে অর্পণ করে স্বস্তির শ্বাস ফেলল মালিকপক্ষ। জনগণের করের টাকার অপচয় করে সেই সব ডুবন্ত সংস্থাগুলির রাষ্ট্র-আয়ত্ব্করন করে তত্কালীন শাসকদল ভোট-বৈতরণী পেরলো আর অর্থনীতির ক্ষেত্রে সৃষ্টি হল এক নতুন শ্রেণীর। ট্রেড ইউনিযন লিডার নামক সেই নতুন শ্রেণী রাষ্ট্র-আয়ত্ব্ সংস্থার কর্মীসমূহের ওপর ছড়ি ঘোরানোর পরিস্থিতিপ্রদত্ত অধিকারের অসদ্ব্যবহার করে ঢুকে পড়লো দুর্নীতির বৃত্তে। দু'দশক ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে অবস্থিত রাজনীতিবিদ-আমলা-ব্যবসায়ী দুষ্ট-ত্রয়ী বদলে রাজনীতিবিদ-আমলা-ব্যবসায়ী-ট্রেড ইউনিযন লিডার এই দুষ্ট-চতুষ্টয়ে পরিণত হল।
এই কালখন্ডে দেশের কৃষিক্ষেত্র সাক্ষী ছিল সবুজ বিপ্লবের। রাসায়নিক সার, কৃত্রিম বীজ প্রভৃতির সাহায্যে কৃষিক্ষেত্রে উত্পাদন বৃদ্ধি হল ভালোই, হয়তো সাময়িকভাবে তা অর্থনীতির পালে কিছুটা হাওয়াও দিল, কিন্তু কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধিতে গৃহীত এই পদক্ষেপ ছিল না পরিবেশবান্ধব, তাই কিছু ব্ছর পর থেকেই এর বিষময় ফল প্রত্যক্ষ করলো গোটা দেশ, সে কথা পরবর্তীতে আলোচ্য।
পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে এই সময়টি ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর, সারা দেশের মতো এই সময় পশ্চিমবঙ্গেও হাকিম বদলানোর পালা চলছিল, তবে পশ্চিমবঙ্গে হাকিম এবং হুকুম দুই’ই বদলেছিল অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এবং ঘন ঘন । বলা চলে নতুন নতুন হাকিম আর হুকুমের পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ। বঙ্গ রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে তখন কুশীলব পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছে । এই ঘন ঘন পরিবর্তনের সুযোগে উপরোক্ত দুষ্ট-চতুষ্টয় পশ্চিমবঙ্গে জাকিয়ে বসেছিল, সারা ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই এই দুষ্ট-চতুষ্টয়-র প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশী। স্বাধীনতার পর প্রথম দুদশকে পশ্চিমবঙ্গ যদি দুর্নীতি বিরোধিতার নিরিখে সারা ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকে তাহলে এই কালখন্ডে পশ্চিমবঙ্গই ছিল দুর্নীতিতে সবচেয়ে এগিয়ে। ক্ষুদ্র দ্ল্গ্ত স্বার্থ ও ব্যক্তিগত স্বার্থ তখন রাজ্যের স্বার্থের তুলনায় বেশী গুরুত্ব পাচ্ছিল। এই কালখণ্ডেই পশ্চিমবঙ্গ ধীরে ধীরে সুশিক্ষিত, মেধাবী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীর অধিকারীও সত নেতাদের বদলে অর্ধশিক্ষিত, মস্তান পরিবৃত ও অসত্ নেতাদের ক্ষমতার অলিন্দে আনাগোনা প্রত্যক্ষ করলো। স্বাধীনতার পরের প্রথম দুদশকের খাদ্য ঘাটতি জনিত জনক্ষোভ হয়তো এই “পালাবদলের পালা “ রূপয়নে কিছুটা হলেও নেতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল। অধিক উত্পাদন (যা জোগান বাড়িয়ে বাজারে সংশ্লিষ্ট জিনিষের দাম কমিয়ে মালিকের মুনাফা কমায় ) রোধে মালিকের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ায় ধর্মঘট ডাকতে শুরু করলো শ্রমিক নেতারা। কোথাও কোথাও এই ধর্মঘট মালিকের গণেশ উল্টোনোর কাজে সহায়ক হবার জন্য দীর্ঘস্থায়ী হতে হতে চিরস্থায়ী হয়ে গেল। পশ্চিমবঙ্গ ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু শিল্প ও বর্ধিষ্ণু শিল্পপতি এবং ক্ষয়িষ্ণু শ্রমিক ও বর্ধিষ্ণু শ্রমিক নেতার। শিল্পের সঙ্গে শিল্পপতির এবং শ্রমিকের সঙ্গে শ্রমিক নেতার এই ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে ঠেলে দিল পঙ্গুত্বের দিকে। এভাবেই কেটে গেল একটি দশক। বঙ্গ রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে “ পালাবদলের পালা “ সম্পূর্ণ হল এবং পোহালে শর্বরী দেখা গেল রাজদণ্ড পাকাপাকি ভাবে হস্তগ্ত করেছে দুষ্ট-চতুষ্টয়। এর পর হাকিম আর হুকুম কোনওটিই বদলায়নি দীর্ঘদিন। অর্থনৈতিক পঙ্গুত্ব স্থায়িত্ব লাভ করেছে।
জাতীয় অর্থনীতির এই গড্ডলিকা-প্রবাহ ধাক্কা খেল ১৯৯১ সালে।সোভিয়েত-পতনের সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত-নির্ভর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পূতিগন্ধময় অস্তিত্ব বিলুপ্ত হল গোটা দুনিয়া থেকে। ফুটো নৌকো থেকে রক্ষা পাবার তাগিদে ভারতীয় নেতৃত্বের নিদ্রাভঙ্গ হল। কিন্তু হা হতোশ্মি, কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ হল কিন্তু সে উঠে বসল না বরং বা দিক থেকে ডান দিকে ঘুরে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। ধ্বংসপ্রাপ্ত সোভিয়েত ইউনিযন-এর বদলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে এবার আদর্শ করলো জাতীয় নীতিনির্ধারক্-রা। অবশ্য মিশ্র অর্থনীতির মিশ্র ভাবটি অটুট রইলো শুধু সমাজতান্ত্রিক ঝোক ধনতান্ত্রিক ঝোকে বদলে গেল, অর্থাত্ এখনও সরকারি-বেসরকারি উভয় সংস্থাই অর্থনীতিতে থাকলো কিন্তু এখন তাদের মধ্যে থাকলো প্রতিযোগিতা। বিনিয়োগের এবং বিপণনের ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণমুক্ত হল, লাইসেন্স রাজ ঠাই পেল ইতিহাসের পাতায়। তাবলে দুর্নীতি দূর হল না, দুষ্ট-চতুষ্টয়ের প্রাধান্য অটুট রইলো শুধু দুর্নীতির পদ্ধতি বদল হল। কারণ এরপর দেখা গেল উলটপুরাণ, বেসরকারি সংস্থার রাষ্ট্র-আয়ত্ব্করণের বদলে এবার শুরু হল রাষ্ট্র-আয়ত্ব্ সংস্থার বিলগ্নিকরণ। লাভজনক রাষ্ট্র-আয়ত্ব্ সংস্থাকে অলাভজনক দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেওয়ার নয়া দুর্নীতি চালু হল। আমলাতন্ত্র লাইসেন্স রাজের বদলে হিসেবে কারচুপিকে দুর্নীতির নতুন হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করলো। সংস্থার বিলগ্নিকরণ রোধ করার নামে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাজানো লড়াই করে পরে উপযুক্ত রজতচক্রের বিনিময়ে বিলগ্নিকরণ মেনে নেওয়ার মাধ্যমে নিজের দুর্নীতিক্ষেত্র বজায় রাখলো ট্রেড ইউনিযন লিডাররাও । তবে হ্যা, বাজারে প্রতিযোগিতা থাকায় শিল্প ও পরিষেবাক্ষেত্রের গুণগত মানের উত্কর্ষ সাধিত হল, উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশও ঘটলো, রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নতুন বিনিয়োগকারীদের উঠে আসার পথও প্রশস্ত হল কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরী না থাকায় ও সরল করবিধি না থাকায় নতুন বিনিয়োগকারীরা উঠে আসতে ব্যর্থ হল। দেশের মাথাপিছু গড় আয়ের (জি ডি পি ) বৃদ্ধির হার সামান্য বৃদ্ধি পেলেও অর্থাত্ জাতীয় অর্থনীতির সামান্য শ্রীবৃদ্ধি ঘটলেও সেই সুফল পুরোটাই চলে গেল দুষ্ট-চতুষ্টয়ের অজগরগ্রাসে, সাধারণ মানুষ রইল বঞ্চিতই।
তবে হ্যা, এসময় থেকে কেন্দ্রীয় স্তরেও হাকিম আর হুকুম দুইয়েরই বদল নিয়মিত ব্যবধানে হতে থাকলো, অর্থনীতির মতো রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রতিদ্বন্দীতা দেখা গেল। অসত্ রাজনীতিবিদরাও গ্দির লোভে কিছুটা হলেও দেশবাসীর কথা ভাবতে লাগলো। নতুন সহস্রাব্দের প্রথম অর্ধদশকে এতদিনের অবহেলিত পরিকাঠামো ক্ষেত্র এসময় কিছুটা হলেও গুরুত্ব পেল, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পেল, সোনালী স্বর্ণ চতুর্ভুজ ইত্যাদি নানানরকম পরিকল্পনার দ্বারা দেশের পরিবহনের হাল ফেরানোর এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের উঠে আসার পথ তৈরীর চেষ্টা হয়েছিল। দুষ্ট-চতুষ্টয়ের কায়েমী স্বার্থে ঘা লেগেছিল , হাকিম বদলাতে দেরী হয়নি।তার পরের দশ বছর পুতুল হাকিম আর দুষ্ট-চতুষ্টয়ের অন্তরাত্মার হুকুমে দুর্নীতি হয়েছিল দুর্নিবার। জর্জরিত জনসাধারণ হাকিম বদলেছিল সোত্সাহে। নতুন হাকিমের হুকুমে দুর্নীতি-দৈত্য আজ বোতলবন্দী, সরাসরি অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার , আধার-প্যান সংযোগ সাধন , সুইজারল্যান্ড সরকারের থেকে তথ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায়, বিমুদ্রাকরণ ইত্যাদি নানান অস্ত্রের আঘাতে সে আজ ঘায়েল। ঐতিহাসিক জিএসটি চালুর মাধ্যমে কর ব্যবস্থার সরলীকরণ এবং পরিকাঠামোর অকল্পনীয় বৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতিকে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সুফল গ্রহণে সক্ষম করে তুলেছে।
কিন্তু এরপর কি? ১৯৯১-র সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মত আজকের পৃথিবীতে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিও তো সঙ্কটে। জাতীয় অর্থনীতিকে বাঁচাতে গেলে তো এই জীর্ণ তরণীকেও ত্যাগ করতে হবে। এ বার বিকল্প কি? বিদেশী অর্থনীতির অক্ষম ও সক্ষম অনুসরণ করে সাতটি দশক তো অতিক্রম করা গেল। কিন্তু হিসেবের খাতা খুলে দেখা গেল হাতে রয়েছে পেন্সিল, বাঁদিকে হাটার প্রথম চুয়াল্লিশ বছরে দেশের মাথাপিছু গড় আয়ের (জি.ডি.পি.) বৃদ্ধি ছিল বছরে ৩.৫ থেকে ৪ শতাংশ। ডানদিকে পা ফেলার পরের ২৬ বছর জিডিপি'র বৃদ্ধির হার দাঁড়াল বছরে ৫ থেকে ৮ শতাংশ। আমাদের সঙ্গে একই সময়ে যাত্রা শুরু করেছিল আণবিক বোমা বিধ্বস্ত জাপান এবং নবগঠিত মরুময় ইসরায়েল। আজ মাথাপিছু গড় আয়ের (জি ডি পি ) দিক দিয়ে তারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়। গত সাত দশকে জাপানের জিডিপি'র বৃদ্ধির হার ছিল বছরে গড়ে ১০ শতাংশ আর ইসরায়েলের ৮ থেকে ৯.৫ শতাংশ। এক যাত্রায় পৃথক ফলের একটাই কারণ, জাপান এবং ইসরায়েল নিজেদের দেশের উন্নতির জন্য নিজেদের দেশের উপযোগী অর্থনীতিই গ্রহণ করেছিল আর অর্থনীতি শাস্ত্রের আবিষ্কর্তা দেশ ভারতবর্ষ ( অর্থশাস্ত্র-কৌটিল্য ) নিজেদের দেশের উন্নতির জন্য মুখাপেক্ষী হয়েছিল বিদেশের। তাই অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র থেকে বাঁচার জন্য ভারতবর্ষ তথা সমগ্র বিশ্বের আজ প্রয়োজন সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক উভয় প্রকার অর্থনীতি থেকে পৃথক স্বদেশী অর্থনীতির পথে চলা। কি এই স্বদেশী অর্থনীতি? সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির থেকে তা আলাদা কি প্রকারে ?বিশ্লেষণে দেখা যাক ।
এই স্বদেশী অর্থনীতির পথে চলেই ২৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতির চল্লিশ শতাংশ ছিল ভারতের দখলে। এই অবস্থা চলেছিল প্রায় ১০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। মনে রাখা দরকার আলোচ্য সময়কালে আলেকজান্ডারের গ্রীস সাম্রাজ্য তার দ্রুত উত্থান ও পতন নিয়ে পৃথিবীর বুকে বজায় ছিল। প্রায় চারশ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে সমগ্র ইউরোপ শাসন করেছে রোম,আরব সাম্রাজ্য তার আগ্রাসী শক্তিতে এশিয়া আফ্রিকা ও ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকাকে এনেছে নিজের অধিকারে, তবু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারতের সঙ্গে পেরে ওঠেনি কেউ। ভারত কিন্তু নিজ দেশের বাইরে কোনও দেশ দখল করেনি, কোনও সাম্রাজ্য স্থাপন করেনি বরং নিজ দেশের বাইরে থেকে আসা গ্রীক, শক, হূণ, কুশান, আরব প্রভৃতি একের পর এক আক্রমণকারীকে প্রতিরোধ করেছে ক্রমাগত আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে পরম যতনে। ১০০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভারত তীব্রভাবে আক্রান্ত,পরাভূত এবং লুণ্ঠিত হয় মামুদের দ্বারা। ভারতের অর্থনীতিতে এর কিছুটা হলেও প্রভাব পড়ে, সেজন্য দেখা যায় এই সময় থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবদান চল্লিশ শতাংশ থেকে তিরিশ শতাংশে নেমে আসছে অধিকারী হচ্ছে। তা সত্বেও তখনও কিন্তু ভারত বিশ্বের অন্য দেশসমূহের তুলনায় তখনও অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে ছিল, বাকি কোনও দেশই তখনকার বিশ্ব অর্থনীতির তিরিশ শতাংশের অধিকারী ছিল না। এরকম অবস্থায় কাটে আরও দুশতক। এর পর আসে আরও ভয়ংকর অবস্থা, ভারত পরাধীন হয় তুর্কী আক্রমণকারীদের দ্বারা। পরাধীনতার স্বাভাবিক নিয়মেই আমাদের দেশ তখন প্রবল অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়। ফলস্বরূপ ভারতের অর্থনীতি গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে মাত্র কুড়ি শতাংশ অবদান রাখতে সক্ষম হয়। তবুও ভারত বিশ্বের অন্য দেশসমূহের তুলনায় তখনও অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে ছিল, বাকি কোনও দেশই এক্ক্ভাবে তখনকার বিশ্ব অর্থনীতির কুড়ি শতাংশের অধিকারী ছিল না। এমনকি ভারত যাদের হাতে পরাধীন ছিল সেই তুর্কীদের নিজেদের দেশ তুর্কিস্থানও তখন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারতের তুলনায় পশ্চাত্পদ ছিল। দাস বংশ থেকে মোগল বংশ, তুর্কীদের অধীনে ভারত ছিল প্রায় সাড়ে পাচসো বছর। এই কালখন্ডে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা ঐ কুড়ি শতাংশের আশেপাশেই আটকে ছিল। এর পর এল ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে সবচেয়ে কালো দিন , যখন ব্রিটিশ শক্তির অধীন হল এবং স্বদেশী অর্থনীতির পথ থেকে বিচ্যুত হল। পলাশীর প্রান্তরে যখন ক্লাইভের খঞ্জর লাল হয়েছিল তখনও বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবদান কুড়ির নীচে নামেনি আর ১৯৪৭-এ ব্রিটিশ যখন ভারত থেকে বিতাড়িত হল তখন বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবদান মাত্র দু’শতাংশ। স্বাধীনতার সাত দশক পর আজ বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবদান মাত্র পাচ’শতাংশ। তাই আজ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের মুখ ফেরাতে হবে সেই স্বদেশী অর্থনীতির দিকেই। তবেই ভারত আবার জগত্ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
আজ ঠেংড়িজির জন্মশতবর্ষের পুন্যলগ্নে দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে একটাই প্রার্থনা বামপথে বা ডানপথে না হেঁটে একটু সোজাপথে হাটুন। সমাজতান্ত্রিক বা ধনতান্ত্রিক উভয়প্রকার অর্থনীতির পথ পরিত্যাগ করে যে অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে ভারত পরাধীনতার আগে দু'সহস্রাব্দ ধরে বিশ্বের সমৃদ্ধতম দেশ হিসেবে পরিগণিত ছিল সেই স্বদেশী অর্থনীতিকে গ্রহণ করুন তবেই অর্থনৈতিকভাবে “ভারত আবার জগত্সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে"।
Home পটভূমি / Historical Background